পনেরো বছর বয়সে
দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছিল মেয়েটা,
আঠেরোতে পা দিয়ে বসল,
ছিদ্রভর্তী এক ভালবাসার ডিঙ্গিতে।
ভালবাসার জন্য দিনের পর দিন পেরুতে হল,
এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।
সে এক বিচ্ছিরি কান্ড!
স্বপ্ন চলল, চলল ভালবাসাও।
ভালবাসলে নাকি দিগ্বিজয়ী হওয়া যায় না;
অনিয়মের সে সব প্রথা ভেঙ্গে,
সফলতার দ্বার ধরে যখন সে দাঁড়াল..
শরীরে…মনে… অসংখ্য রক্তক্ষরনের
গদগদে ঘা!
কয়েকটা দিয়ে তখনো গড়িয়ে পড়ছে
ফিনকি দিয়ে রক্ত!
মেয়েটার হাতে রক্তমাখা তরবারী।
ভাঙ্গা তার ডান পায়ের হাঁটু,
মাথার সিঁথী গড়িয়ে পড়ছে
লাল রক্ত কপালে।
মুখ-গলা আচ্ছন্ন হয়ে আছে সে রক্তে।
বুকের রক্তে আঁচল লেপ্টে আছে গায়ে।
সেসব কেউ দেখতে পেল না,
দেখল মেয়েটার হাসি!
সহস্র যুদ্ধের দামামা শান্ত করে যে হাসি;
নিকোটিনে পোড়া প্রেমিকের ফুসফুসে,
শুদ্ধ রক্তের প্রবাহ শুরু করে যে হাসি;
শরৎের সকালে সোনালী ধান ক্ষেতে,
ঢেউ খেলে যায় যে হাসি।
সে এক বিচ্ছিরি কান্ড!
ছিদ্রভর্তী ডিঙ্গীর মাঝি
ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালালো সেসব দেখে।
মেয়েটি ততেও হাসে,
হাসে যেমন ডোবা জুড়ে হাজারটা লাল শাপলা।
সে এক বিচ্ছিরি কান্ড!
ছাব্বিশে তাকে নিয়ে যাওয়া হল ছাদনা তলায়।
আইবুড়ো ডাকে পরিচিত সে ততদিনে,
আড়ালে আবডালে।
এর পর আর দশটা মেয়ের মতই জীবন।
সফলতার হিসেবের চেয়ে,
হেঁশেলের হিসেব মেলানো হল বেশি জরুরী।
এখন বয়স তার বিয়াল্লিশ।
তার ঘরের সবকটা জানালার,
আধেকটা বন্ধ, আধেকটা খোলা।
আধখোলা জানলা দিয়ে সে দেখে
রোদের ঝলকানি,
বৃষ্টির খুনসুটি,
মেঘের লুকোচুরি।
আর সেই দিগ্বিজয়ীর হাসি মুখে নিয়ে বলে,
ছি:! কি বিচ্ছিরি ছিল সে সব কান্ড!
০৮.১৭.২০২০